একলা ঘরে মুমু

শীত পড়েছে এবার। বাইরে বেরোলে শরীর যেন জমে যায় এমন না। বেশ আরাম করেই গল্প করছে দুই বোন মুমু আর মৌর‍ী। ওদের মা সব কাজ করে টেবিলে বসে বসে খাবার জন‍্য ডাকছেন। মিহাদ, মিনু, নুসরাত খেয়ে শুয়ে পড়েছে। কিন্তু মুমু আর মৌরীর গল্প শেষ হয়না আর মায়ের কথাও কানে যায় না।
শেষ পযর্ন্ত মা রেগেমেগে এসে ধমক লাগালেন। বাঘ দেখেও তারা এত ভয় পায় না যতখানি মায়ের ধমকে পেয়েছে। কথায় আছে না ” সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাকা করতে হয়”।
সুরসুর করে দুই বোন খেতে গেল। ভাতের সাথে মায়ের কথাও গিলতে লাগল। মুমু মনে মনে বলল… উফ এই মা টা না। কিযে বকবক শুরু করলেন এই খাবার সময়। দেৎ….ভাত টা ভালো ভাবে হজম হচ্ছে না।
লম্বা লেকচার শেষ করে মা চলে গেলেন। আর বলে গেলেন খেয়ে পরিষ্কার করে ঘুমাতে।
দু বোন মিলে পরিষ্কার করল ঠিকই। কিন্তু ঘুমাতে গেল শুধু মৌরী।
মুমু সাহেবার শখ হয়েছে অর্ধেক রাত জেগে বই পড়বেন।
বুঝো এবার শখ কাকে বলে………

ঘুম থেকে এমনি সবার লেইট করে উঠেন আমাদের এই গন‍্য মান‍্য মুমু। তবুও যদি নিজ ইচ্ছায় উঠতেন মনকে বুঝ দেয়া যেত। কিন্তু উনাকে রীতিমতো টেনে তুলতে হয়।

যাইহোক…… বেশি না-ই বলি।
উনি গেলেন কফি বানাতে।
বাপ রে…বইয়ের সাথে কফি। এতো রাতে। ভাবা যায়!!!!

মৌরী লাইটের কারণে ঘুমাতে পারছে না। আবার মুমুও লাইট ছাড়া বই পড়তে পারবে না। বাধ্য হয়ে মুমু অন‍্য রুমে চলে এলো। ঘরে কেউ থাকে না।
উপস…..থাকে। কম্পিউটার, টেলিফোন বড়, একটা পালংক, আর কিছু মশা। অবশ্য মশা জাতিদের সংখ্যা কম। মুমু সাহেবা কয়েল জালালেন।
রাত দেড়টা। সব ঘরের লাইট অফ। দুটি ঘর বাদে।
একটা যে রুমে বসে পড়বে আরেকটা রান্না। রান্না করতে পারে তাই যখন যা ইচ্ছে লুকিয়ে রান্না করে খায়।
তাই মা ও মাঝে মাঝে অবাক হোন এটা খুজে যে হঠাৎ হঠাৎ ডিম আলু পেয়াজ কমে কিভাবে!!!
ইদুর ত আর নিতে পারে না আর ঘরে ত ইদুর নেই । কিন্তু মা এটা জানেন না যে ঘরে বড় একটা তাদের সাথেই উঠাবসা করে।……

যাই হোক……

মুমু আরাম করে বসে বই পড়তে থাকে। একটু পর পর সুড়ুৎ……সুড়ুৎ
কফি খাওয়ার আওয়াজ।
রাত প্রায় তিনটা।
বাইরে হঠাৎ কুকুরের করুণ আওয়াজ। গাছ থেকে কিছু নিশাচর উড়াল দিল।
এসবে খেয়াল নেই মুমুর……
সে পড়ছে মনে মনে…. “রাত তিনটার পর” বইটা।
একটা অংশে এসে মুমু বেশ ঘামতে থাকে। বইয়ে লেখা….. নীল পানির জন‍্য বিছানা ছেড়ে উঠে…..গ্লাস নিয়ে জগের কাছে গিয়ে পানি ঢালতেই দেখে….একি রক্ত…
রক্ত কোথা থেকে এলো….. হঠাৎ লাইট গুলো জলতে নিভতে থাকে।
কোথাও বহুদূর থেকে করুণ গোঙানীর আওয়াজ। থেকে হাসির আওয়াজ। সেই হাসির শব্দে নীলের অন্তর কেপে উঠছে। হৃৎপিণ্ডে হাতুড়ি পিটছে। সে আর স্থির থাকতে পারছে না। কানে হাত দিয়ে বসে পড়েছে।
হঠাৎ আলো চলে গেল।
মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে আছে সে। হঠাৎ কারো আসার শব্দ। ধীরে ধীরে মাথা তুলে….দেখে সে বীভৎস চেহারার এক লোক তার দিকে আসছে…. দৌড়ে এসে নীলের উপর ঝাপটে পড়ে……………………………!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

পরদিন নীলের মাথাবিহীন দেহ পাওয়া যায়। কিন্তু কোথাও এক ফোটা রক্ত নেই।
দেয়ালে কালো রক্তের মত কিছু দিয়ে লেখা….
“””” সে এসেছে আবার এসেছে………”””””

মুমু গল্পে হারিয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ কুকুরের খেপে যেয়ে যে আওয়াজ করে ঐটা শোনে বাস্তবে ফিরে।

বই রেখে রান্না ঘরে গিয়ে কফি আনার বদলে রুটির জন‍্য যে ময়দা মাখানো ছিল ফ্রিজে সেটা নিয়ে পটাপট পাঁচ ছয়টা রুটি তৈরি করে ফেলে। বাটিতে তরকারি আর রুটি নিয়ে আবার ফিরে আসে।
একে ত রাতের খাবার খাইছে আবার এখন রুটি। ব‍্যাস আর কি পাওয়া যায় তাকে। তবে সে ত বই পড়বেই। একটু রেস্ট নিতে হবে। প্রচুর খেয়ে ফেলেছে। একটু হেলান দিল। চোখটা লেগে গেছিল।
হঠাৎ কাচের কিছু পরার আওয়াজ এলো। চমকে উঠল সে। ভয়ে ভয়ে উঠল। শরীর হালকা হালকা লাগছিল। তার মনে হলো সে রাতে অল্প খেয়েছে।

ভয়ের মাঝেও যে খিদে পায় তাও এত খেয়ে আজকে জানলাম…….

ভয়ে ভয়ে রান্না ঘরের দিকে চোখ। পিছনের বের হবার দরজা। মানে বারান্দার। কেউ যেন তালা খুলার চেষ্টা করছে। চমকে গিয়ে সে মা বলে চিৎকার দেয়। আস্তে আস্তে এগিয়ে যায়। মনে মনে ভাবছে এত জোরে চিৎকার দিল কেউ জাগল না।
ভয়ে আর কথা বের হচ্ছে না। দরজা খুলার ও সাহস পাচ্ছে না। গিরিলের তালা খুলার শব্দ হলো। তারপর সব চুপ…….. নিশ্চুপ সব কিছু…….

ক‍্যাচ ক‍্যাচ করে ধীরে ধীরে শব্দ হতে থাকে। মুমু নিঃশব্দে দাড়িয়ে দরজায় কান পেতে। হঠাৎ নতুন এই আওয়াজে পিছন ফিরে তাকায়….. ভিতরের ঘরের সাথে এই ঘরের সংযুক্ত দরজা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আস্তে আস্তে গিয়ে দামমমমমম্…….

মুমু ভয়ে সিটিয়ে যায়। মা…..বাবা…. বলে চিৎকার করতে থাকে ঐ জায়গায়ই দাড়িয়ে বের হবার দরজার ঐখানে। হঠাৎ শুনতে পায়। কেউ আসছে…. কেউ আসছে…..
হঠাৎ কেউ দরজায় নক দেয়….. একবার …দুবার….তিনবার….. তারপর দরজায় যেন অবিরাম শিলা বৃষ্টি পড়তে শুরু করে….
আওয়াজে মুমুর কান তালা লাগানোর মত অবস্থা।
ভয়ংকর গোঙানির আওয়াজ….হৃদয় কাপিয়ে দেয়……..
মুমুর হাত পা কাপতে থাকে….থর থর করে..

তারপর হঠাৎ সব বন্ধ। নিরব চারিদিকে।যেন কিছুই হয়নি….
মুমু আস্তে আস্তে খাটে এসে বসে….

মাথার চুল বেয়ে ঘাম ঝড়তে থাকে….

মুমু অস্থির হয়ে উঠে….কি করবে কিছুই বুঝতে পারেনা।
গলায় ঝুলতে থাকা সাদা উড়না লাল হয়ে উঠে!!!
আড় নজরে চোখে পড়ে। আস্তে আস্তে চোখ উপরে তুলে মুমু *

মুন্ডু!!! কাটা মুন্ডু…… ঝুলে রয়েছে মাথার উপরে…
মুমু চিৎকার করে সরে আসে……

রক্তের ফোটা বিছানায় পড়ে চাদর লাল হয় উঠে।

দরজাটা আস্তে করে খুলে যায়। মুমু চমকে পিছন ফিরে।
এগিয়ে যায় দরজার দিকে। বাইরে থাকায়।
চোখ দুটো ভয়ে আতঙ্কে কেমন জানি হয়ে গেছে। ছোট্ট খুকি যেমন লুকিয়ে কিছু দেখার চেষ্টা করে ঠিক তেমনি মুমু পর্দা ধরে বাইরে তাকায়।
কিছুই দেখতে পায় না….

কিছুক্ষণ পর মুমু চোখ আবার বড় হয়ে উঠে….মুখে আতঙ্কের চাপ… জোড়ে জোড়ে শ্বাস টানতে থাকে………..

সাদা মতন কি যেন আসছে তার দিকে। নিশ্বাসের বাতাসের শব্দ আরো বেড়ে যায়….মুমু নড়তে পারছে না!!!! চিৎকার ও করতে পারছে না। কেমন জানি তাকে সম্মোহন করে ফেলেছে……
হৃৎপিণ্ডে যেন হাতুড়ি পিটছে মুমুর। অসহায় ভাবে চেয়ে আছে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে। বড্ড অসহায়ত্ত্ব অনুভব করছে মুমু।

বিশ্রী একটা মুখ মুমু মুখের সামনে….মুমুর ভয়ে দুর্গন্ধে বমি করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু মুমু নড়তে পারছে না। মুখ সরাতে পারছে না। অদ্ভুত চেহারার লোক আরও কাছে আসছে…. মাংস খসে পড়ছে তার মুখ দিয়ে। মুমু পাগল হয়ে যাবে……প্রাণপণে চিৎকার করার চেষ্টা। দুনিয়া কেমন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে। মুমু আর কিছুই দেখতে পারে না। কিন্তু ভয়ংকর গোঙানিতে মুমু কান আর সইতে পারছে না। সে জোড়ে চিৎকার করে উঠে…!!!!!!!!!!!!!!

হঠাৎ চিৎকারের আওয়াজে মিনুর হাত থেকে প্লেট পড়ে প্লেটে থাকা সসের কিছুটা নুসরাতের কাপড়ে পড়ে যায়। মুমু যে এত বড় চিৎকার করল সেদিকে খেয়াল নেই যেন। রাগ দেখাচ্ছে মিনুকে।
মা তাড়াতাড়ি করে যে রুমে মুমু বই পড়তে এসেছিল গিয়ে মুমুকে ধরেন। মুমুর অবস্থা দেখে জড়িয়ে ধরে মেয়েকে শান্ত করেন। মিনু নুসরাত ও আসে।
মুমু কিছুই বুঝতে পারে না।o
মৌরি মুমুর কাছে গিয়ে পানি দেয়।
মুমু বুঝতে পারে যে সে স্বপ্ন দেখছিল। আরাম করে শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। মুমু শান্ত হলে সবাই যারযার কাজে চলে।

মুমু ধীরে ধীরে উঠে ফ্রেশ হবার জন‍্যে। বিছানার সাথের টেবিলে লাল কিছু দেখতে পায়। পানি ফোটা মতন…..
মুমু ঝুকে দেখার চেষ্টা করে।স্বপ্নের কথা মনে হতেই ভয়ে পেয়ে যায়। ভাবে রক্তের ফোটাই হবে……
মুমু ভয়ে মাকে মা….মা…মা… বলে ডাকতে থাকে।

মা দৌড়ে আসেন। মুমু আঙুল দিয়ে দেখায় বলে…’ মা ঐখানে রক্ত…’
মা যাবার আগেই মিনু গিয়ে ছোট্র টেবিল থেকে লাল জিনিস টা আঙুল দিয়ে তুলে বলে ” এটাত সস। আমার প্লেট থেকে এখানে পড়ছ আগে “

মা প্রথমে মুমু দিকে পরে বিছানায় থাকা ভুতের গল্পের বইয়ের দিকে পরে আবার মুমুর দিকে থাকান।
মুমু বুঝে এখানে লবণ থাকলে হয়ত লবণ মেখে মুমুকে আস্ত খেয়ে ফেলবেন মা।
কিন্তু মা কিছু বলেননি। শুধু বললেন…”আজ আসুক আপনার আদরের বাপ….আপনাকে গল্পের বই পড়াচ্ছি ভালো করে…খুব শখ হয়েছে না!!!!!
…. ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

মিনু নুসরাত মৌরি মুখ টিপে হাসতে থাকে। মুমু চাইতেই বন্ধ হয়ে যায়। কারণ মা ঘরে না থাকলে এই মুমুই রান্না করে। এখন রাগালে পরে আর রান্নাই করবে না।

কিছুক্ষণ পর……

ফোন বেজে ওঠে…..বুবুর বোন।
ফোন তুলতেই ছোট্ট মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসে….
” ও মন্টি…..আমরা আসছি”
মুমু হাসে….কথা বলা শুরু করে…
ফোনের পাশে সেই আগের মত লাল ফোটা দেখে ও ভয় পায় না। আগের বোকামির ঘটনা মনে করে মুচকি হাসে। অন‍্য রুমে চলে যায়…..

কিন্তু সেটা রক্ত ই ছিল। ঘন লালচে রক্ত।
কিন্তু ঘরের কারো ত হাত টাত কিছু কাটে নি।

তাহলে!!!…………..

Writer : Saiful Islam Robin (সাইফুল ইসলাম রবিন)

Send private message to author
What’s your Reaction?
14
5
0
10
0
10
20
Written by
Saiful Islam Robin
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!