স্যার হাজার পঞ্চাশ টাকা যদি দিতেন।আমি যত তাড়াতাড়ি পারি ফেরত দিব।আমার ছেলেটাকে একটা চায়ের দোকান করে দিব স্যার,খুব পরিশ্রমী ছেলে।
বাসার দারোয়ানের আবদার শুনে হীরার ধা করে মাথায় রক্ত উঠে যায়,এই গরীবের জাতটাই শালা ধান্দাবাজ,তাকে একা পেয়ে যা বুঝাবে তাই বুঝবে ভাবছে।হীরা কিছু বলবেনা,বললে গালি বের হবে, দরকার নেই,সে উঠে রুমে গিয়ে রাহীকে পাঠায় দেয়,তার ছোটভাই, সে ডীল করুক বেটাকে।
ভাইয়া টাকাটা দিয়ে দিলাম,রাহী এসে হাসিমুখে জানায়।
দিয়ে দিলি মানে! তুই কি ইডিয়ট! রাহী আমাদের বাবা মা নেই,এই প্রপার্টি, বিজনেস এগুলার উপর সবার চোখ থাকে তুই বুঝিসনা? এই দেশের গরীব লোক মানেই চোর ছ্যাচড়,তোকে কত শিখাব।
রাহী উত্তর দেয়না।হাসে।ভাইয়াকে তার ছোট মনের ও মনে হয়না। সাবধান হওয়ার দরকার আছে সেও মানে,কিন্তু ভাইয়া একটু বেশি প্যারানয়েড।এই দুনিয়াটায় অনেক সুন্দর আছে,আনন্দ আছে,ভালো মানুষ আছে,ভাইয়ার রাডারে এসব পড়েনা।
আজ হীরা ছাড়েনা,টাকা দেয়া নিয়ে
দুজনে এক পর্যায়ে গলা উচু করে তর্ক শুরু করে। রাহী হাসিখুশি মানুষ সেও জবাব দিয়ে ফেলে।
ড্রইং রুমে বসে টাকা গুছিয়ে নিতে নিতে ঝগড়ার আওয়াজ শুনে ফয়জু ভয় পেয়ে যায়,বিরবির করে বলে পাগল,পুরাই ডেঞ্জার পাগল । যদিও এরকম ঝগড়া সে প্রায়ই শোনে তাও প্রতিবারই সে হীরাকে ভয় পায়।
রাহীর মোবাইল বেজে উঠায় ঝগড়ায় বাধা পড়ে,তামান্নার ফোন।রাহী ঝলমলে একটা হাসি দিয়ে ফোন ধরে, কেমন আছো তামান্না? আমি সকালে এতবার ফোন দিলাম ধরলেনা।
তুমি ঠিক আছো? তামান্না আস্তে আস্তে বলে।রাহীর মনটাই খারাপ হয়ে যায়।কাল রাতে হীরা ভাই তামান্নার সাথে যা তা রাগারাগি করেছে,মেয়েটা এত কিছু সহ্য করেও কিছু বলেনা শুধু জানে রাহীর কাছে বড় ভাই কতটা আপন দেখে।তামান্নার মত মেয়ে হয়না,রাহীর খুব ইচ্ছা করে একটু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,হাতটা ধরে একটু বসে থাকে,সরি বলে।
তামান্না তুমি ভাইয়ার কথায় কিছু মনে করোনা,ভাইয়া ওরকম বলে কিন্তু উনার মনে এমন না।পছন্দই করে তোমাকে।
তামান্না আস্তে আস্তে বলে রাহী আমার ভয় লাগে,মনে হয় কিছু ঠিক হবেনা আর..
পাগল মেয়ে ধুর এত ভাবো কেন,ভাইয়াকে আমি দেখবো।বিজনেস সামলায় তার মনটা একটু শক্ত হয়ে গেসে..কথার মাঝখানে হীরা হঠাৎ ফোন কেড়ে নেয়,
এই মেয়ে! গোল্ডডিগার,তোমাদের আমি চিনিনা ভাবছো!রাহীকে গাধা পেয়ে পটাইসো, খবরদার এসব মাথা থেকে বের করো,বড়লোকের ছেলে দেখলেই চোখ চকচক করে না?
তামান্না হতভম্ব হয়ে কিছু বলতেই পারেনা।সে যথেষ্ট অবস্থাসম্পন্ন ঘরের মেয়ে,রাহীর চমৎকার হাসি আর ভার্সিটিতে সবাইকে মাতিয়ে রাখা ব্যাক্তিত্বের প্রেমে পড়েছিল,তখন যদি এই হীরার সাথে পরিচয় হত সে কোনদিন এই অপমানের মধ্যে আসতোনা,তামান্না কাদতে কাদতে ফোন কেটে দেয়।
রাহীও এবার আর এত বাড়াবাড়ি মানতে পারেনা।কথা কাটাকাটি বেড়ে দুই ভাইয়ের কথাবার্তা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।তামান্নাকে অনেক চেস্টা করেও রাহী আর যোগাযোগ করতে পারেনা।কয়েক মাস পার হয়।এর মধ্যে একদিন ফয়জু মিয়া পঞ্চাশ হাজার টাকা ফেরত নিয়ে হাজির।
গলির দোকান,খুব ভাল চলছে,সে খুব কৃতজ্ঞ হয়ে টাকাটা ফেরত দেয়।রাহীর প্রায় চোখে পানি চলে আসে, আমাদের গরীব মানুষদের কিছু না থাকলেও আত্মসম্মান আছে,চেস্টা আছে।
হীরা কিছু বলেনা।নাক দিয়ে খালি একটা ফোস শব্দ করে।
ফয়জু একটু ভয়ে ভয়ে বলে ভাইজান ডাক্তার হেলাল সাবে ফোন দিসল,আপনের যাওয়ার কথা আর যান নাই অনেক দিন,ফোন ও ধরেন না, আপনাকে একটু ফোনে ধরায় দিতে বলসে।
হীরা বিরক্ত হয়ে ধমক দেয়, বলসে আর তুমি দিবা? তুমি কার দারোয়ান,হেলাল ডাক্তারের না এই বাড়ির?
রাহী কিছু না বলে ফোনটা নেয়।স্লামালিকুম হেলাল আংকেল, সরি অনেকদিন যাইনি, আসলে একটু ব্যাক্তিগত কারনে, যাবো আমি সামনে যাবো।
কে রাহী? ডা হেলাল জিজ্ঞেস করেন।
হ্যা আংকেল
একটু হীরাকে দেয়া যাবে?
আচ্ছা দাড়ান বলি।ভাইয়া নে।একটু কথা বল
হীরা বিরক্ত হয়েও ফোনটা নেয়।
জী হেলাল সাহেব বলেন।আপনি রাহীকে দিয়ে আমাকে রিকুয়েষ্ট করাবেন না,বিরক্ত লাগে,আপনার সেশনের টাকা বাকি আছে তাই ফোন দিচ্ছেন? শোনেন আমি আর যাচ্ছিনা।আপনাদের এসব ভাওতাবাজি আমার বোঝা শেষ।রাহীকে বাচ্চা পেয়ে এসব বুঝান আমার সাথে পারবেন না।
হেলাল সাহেব একটু লম্বা শ্বাস ফেলেন।
হীরা,তোমার সেশনটা দরকার।রাহী বলে কেউ নেই।তুমি একমাত্র ছেলে।তোমার নাম উল্টা করে তুমি রাহীকে কল্পনা করে নিয়েছো,তুমি ডিসোসিয়েটিভ পারসোনালিটি ডিজওর্ডার এ ভুগছো ,এটা অনেক বেড়ে যাচ্ছে,তামান্না তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে,ফয়জু ছাড়া কেউ তোমার সাথে কথা বলতেও ভয় পায়,তুমি একটু আসো।আমাদের সেশনটা চালু রাখা দরকার।
হীরা খুট করে ফোন কেটে দেয়।সবাই ধান্দাবাজ।তার ভাইকে সরানোর ষড়যন্ত্র, তাকে একা করে দিয়ে সম্পত্তি টার্গেট করার বুদ্ধি। সে আর ফোনই ধরবেনা এই লোকের, রাহী তুই ও ধরবিনা।
ফয়জু ভয়ে ভয়ে দেখে হীরা নিজের সাথে নিজে কথা বলছে,দুইরকম গলায়,দুই ভাই হয়ে।
১৭/৫/২০২১
গল্পঃ পুনরায়
ডা.মেহদী আশিক চৌধুরী ( Dr.Mehdi Ashik Chowdhur)
ওয়াও। শেষের চমকটা অসাধারণ। যতটা চিত্তাকর্ষণীয় লেখনী ততটাই চমৎকার প্লট। আপনার আরও লেখা পড়তে চাই।