দশ দিন হয়ে গেছে। ডিমের ভেতর ছানাগুলো অনেকটা বড় হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে ছানাগুলো ডিমের ভেতর থেকে শব্দ করে। এ শব্দে টোনাটুনির মন আনন্দে ভরে যায়। সেই সাথে তারা আশ্বস্ত হয় যে বাচ্চারা সুস্থ আছে৷ টোনাটুনি ডিমগুলো পরম যত্নে, পরম আদরে আগলে রাখে। বাইরের কোনো বিপদ যেন তাদের বাচ্চাদের ছুঁতে না পারে সে ব্যাপারে তারা খুব সচেতন।

কিছুদিন পর একে একে ডিমগুলো ফুটে বাচ্চা বের হতে লাগলো। বাচ্চাদের কিচিরমিচির শব্দে তাদের ঘর মুখরিত। বড় বাচ্চাটির নাম মনু, মেঝোটি সনু আর ছোটটি টিনু।

টোনাটুনি এখন খুবই ব্যাস্ত। সারাদিন বাচ্চাদের জন্য খাবার খুঁজতে খুঁজতে কিভাবে যে দিন কেটে যা টের পায় না। সকালে বাচ্চাদের ক্ষুধার্ত শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এরপর শুরু হয় তাদের ব্যস্ততা। সারাদিন খাবারের জন্য দৌড়াদৌড়ি, সন্ধ্যায় বাচ্চাদের সাতহে গল্প। গল্পে গল্পে বাচ্চাদের বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানায়। বাইরের জগতের আনন্দ, ভয়ের বিষয় সব নিয়ে বাচ্চারা এভাবে আস্তে আস্তে জানতে থাকে। বাচ্চাদের মনে কৌতুহল সৃষ্টি হয়, বাইরের জগৎ দেখার, তাকে জানার। কবে তারা উড়তে পারবে, কবে বাবা-মার সাথে বাইরে ঘুরতে পারবে এ চিন্তায় তারা উৎফুল্ল থাকে।

বাচ্চাগুলো দিন দিন বেড়ে উঠছে। সুস্থ-সবল বাচ্চা। মাঝে মাঝেই তারা ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে তাদের মায়ের কাছে বাইরে যাওয়াড় আবদার জুড়ে। “আর কিছুদিন, আরেকটু বড়ো হ” এসব বলে তাদের মা তাদের শান্ত করে।

বাসার আশেপাশে কয়েকদিন ধরে একটা বিড়াল ঘুরাঘুরি করছে। বিড়ালটা বাচ্চাদের শব্দ শুনেছে কিন্তু ঠিক কোথায় বাসা তা এখনো খুঁজে পাচ্ছে না, তাই রক্ষে! টোনা-টুনি খুব ভয়ে আছে। বিড়ালটা যেকোনো সময় বাসা খুঁজে পেয়ে হামলা করতে পারে। তাদের বাচ্চাদের খুব দ্রুত উড়তে শিখাতে হবে। তারা বাচ্চাদের চুপচাপ থাকতে বলে। বাচ্চাগুলোও ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছে।

গতকাল বিড়ালটি বাসার খুব কাছে চলে এসেছিল। টুনি সিদ্ধান্ত নিলো আজই বাচ্চাদের নিয়ে কোনো নিরাপদ জায়গায় উড়ে যেতে হবে। ছোট টিনু এখনো ঠিকমতো উড়তে শিখেনি। তাকে নিয়ে তারা খুব ভয়ে আছে।

একে একে মনু আর সনুকে নিয়ে টোনা-টুনি উড়াল দিলো। তাদের নিয়ে বরই গাছে মগডালে বসলো। এবার টিনুর পালা। তাকে নিয়ে টোনাটুনি এবার উড়াল দিলো। টিনুর কষ্ট হচ্ছে। সে এখনো ঠিকমতো উড়তে পারে না। এদিকে বিড়ালটা তাদের দেখতে পেয়েছে। রাগান্বিত স্বরে চিৎকার করছে। বিড়ালের চিৎকারে টিনুর উড়ার গতি আরো শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। তারপরও তার বাবা-মার সাহায্যে বহুকষ্টে সে বরই গাছে গিয়ে বসলো। টিনু ডালে বসে হাঁপাচ্ছে। এদিকে নিচে বিড়ালটি অনবরত চিৎকার করেই যাচ্ছে।

হটাৎ কি যে হলো!! টিনু পা পিছলে নিচে পড়ে গেলো! আর পড়বি তো পড় একেবারে বিড়ালটির সামনে!! তৎক্ষনাৎ বিড়ালটি টিনুকে মুখে নিয়ে দৌড়। কি থেকে কি যে হলো টোনাটুনি যতক্ষণে বুঝতে পারলো ততক্ষণে টিনু আর নেই। চারপাশ তাদের গগনবিদারী চিৎকারে কাঁপছে। চোখের সামনে বাচ্চাকে হারানোর মত দুঃখ হয়তো আর কিছুতে নেই।

কয়েকদিন পর-

মনু-সনু এখন ভালোই উড়তে পারে। বাবা-মার সাথে ঘুরে ঘুরে তারা এখন খাবার খুঁজে বেড়ায়। আশেপাশের পাখ-পাখালির সাথে পরিচিত হচ্ছে। প্রকৃতির রূপ-রস উপভোগ করছে। তাদের দেখে টোনাটুনির মন আনন্দে ভরে যায়। বাচ্চাদের নিয়ে তাদের দিন ভালোই কেটে যাচ্ছে। শুধু মাঝে মাঝে যখন টিনুর কথা মনে পড়ে যায়; তখন একবুক দীর্ঘশ্বাসের শব্দ ভেসে আসে।

~~~ মুহম্মদ সাদিক ১৮.০৪.২১

Send private message to author
What’s your Reaction?
1
1
0
0
0
0
0
Muhammad Sadik
Written by
Muhammad Sadik
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

Locbook Platform

Locbook is an independent platform for aspiring writers

error: Content is protected !!