বেগুন গাছটায় টোনা-টুনি সংসার পেতেছে। তাদের পরিচয় হয়েছে কয়েক মাস হবে। তাদের প্রথম পরিচয় হয়েছিলো ওই কদম গাছটাতে। একদিন টুনি কদম গাছের ডালে বসে জিরিয়ে নিচ্ছিলো। তখন টোনাও জিরোনোর জন্য একটা ভালো ছায়াময় ডাল খুজছিলো। কদম গাছে সুন্দরী টুনিকে বসে থাকতে দেখে ভাবলো ওখানে গিয়ে বসা যাক; বিশ্রাম আর আলাপ দুটোই হবে। এই ছিলো তাদের প্রথম পরিচয়।
এরপর কতো দিন গেল! আস্তে আস্তে তাদের পরিচয় পরিণয়ে রূপ নিল। কখনো এই গাছের ডালে, তো কখনো ওই গাছের ডালে। কখনো টুনি খাবার খুঁজে টোনাকে খাইয়ে দিচ্ছে আবার কখনো টোনা টুনিকে খাইয়ে দিচ্ছে। এভাবে তাদের দিনগুলো বেশ আনন্দেই কেটে যাচ্ছিলো।
এরপর একদিন তারা ঠিক করলো অনেকদিন তো প্রেম হলো, এবার তো বিয়ে করতে হয়। যেই ভাবা সেই কাজ! তার পরের সপ্তাহেই তারা বিয়ে করে ফেললো। তাদের বিয়েতে পুরনো দালানের দোয়েল, কদম গাছের শালিক, ওপাড়ার বুলবুলি সহ আরো অনেকেই আমন্ত্রিত হলো। ভরপেট খেয়ে যাওয়ার সময় সবাই আশীর্বাদ দিয়ে গেল।
– যাওয়ার সময় দোয়েল বৌ বললো, “শোনরে টোনা-টুনি, বাসা বাঁধবি কই?”
টোনা-টুনি একে অপরের মুখের দিকে তাকালো। বিয়ের আনন্দে এ চিন্তা যে তাদের মাথায়ই আসেনি!
– দোয়েল বৌ তাদের অবস্থা বুঝে বললো, “চিন্তা করিস না। শোন, আমার বাসার পাশে একটা বড় বেগুন ক্ষেত আছে। ওখানে চলে যায়। থাকা-খাওয়ার অভাব হবে না।”-
টোনা-টুনির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তারা দোয়েল বৌকে ধন্যবাদ দিয়ে বললো, “বড় উপকার করলে দিদি। আমরা তো এ কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।”
– দোয়েল বৌ বললো, “তাহলে কালই চলে আয়। আমি তোদের অপেক্ষায় থাকবো।” এ কথা বলে দোয়েল বৌ বাসার দিকে চলে গেলো।
পরদিন সকাল সকাল টোনা-টুনি বেগুন ক্ষেতের দিকে রওনা দিলো। জায়গা দেখে তাদের খুবই পছন্দ হলো। দোয়েল বৌকে ধন্যবাদ দিয়ে তারা তাদের বাসা বানানোর কাজে লেগে পড়লো। এখানে রচিত হবে তাদের স্বপ্নের নীড়।
টোনা-টুনি এখন খুব ব্যস্ত। সারাদিন দুজনই দৌড়াদৌড়ির উপর থাকে। টোনা মাকড়সার জাল – গাছের আঁশ এসব এনে দেয়, টুনি বেগুন পাতা সেলাই করে ঘরের দেয়াল বানায়। আবার টুনি ঘাস-তুলো এনে দেয়, টোনা ঘরের বিছানা বানায়। এভাবে বেশ কিছুদিনের মধ্যেই তাদের সুন্দর-ছিমছাম ঘর তৈরি হয়ে যায়। তারা এখন সারাদিন গান গায়, মাঝে মাঝে খাবার খুঁজতে বের হয়ে যায়; আবার বিকাল বেলায় তাদের প্রতিবেশী দোয়েল, বুলবুলি, চড়ুই, বাবুই এদের সাথে আড্ডা দেয়। খুব সুখে তাদের দিন কেটে যাচ্ছে।
টুনি গর্ভবতী। তার পেটে তাদের ভালোবাসার ফসল। কিছুদিন পর টুনি তিনটি ডিম পাড়লো। সাদার উপর কালো কালো ছোপের ডিমগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। টুনি সারাদিন ডিমে তা দেয়, আর টোনা বাইরে খাবার খুঁজে বেড়ায়; নিজেও খায়, টুনির জন্যও নিয়ে আসে। মাঝে মাঝেই শালিক, চড়ুই, দোয়েল ওদের দেখতে আসে। টুনি ডিমে তা দিতে দিতে ওদের সাথে গল্প করে।
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>> (আগামী পর্বে সমাপ্য)
~~~~~ মুহম্মদ সাদিক
Send private message to author