নবম শ্রেণীতে পড়া সোহান ক্লাসে বারবার নিজের ব্যাগের দিকে তাকাচ্ছে। যেন কোন গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছে ব্যাগে।
পারলে যেন সারাক্ষণ কোলের উপরেই রাখছে ব্যাগটা। ক্লাসে সে আজ কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছে না। টিফিন পিরিয়ডে বন্ধুরা সবাই ক্যান্টিন থেকে খাবার নিয়ে, মাঠে বসে খেতে খেতে আড্ডা দিলেও আজ সে যায়নি। বন্ধু রাজু যখন তার হাত ধরে ক্যান্টিনে নিয়ে যেতে চাইলো, তখন অংক বই আর খাতাটা নিয়ে অংক করার বাহানা করে ক্লাসেই বসে রইলো। রাজুর কিছুটা খটকা লাগে। ওরা দুজনই এক স্যারের কাছে গণিত কোচিং করে, আর স্কুল বা কোচিং-এ সামনে কোন পরীক্ষাও নেই। পরে ভাবলো, কোন কারণে হয়তো আজ সোহানের মন খারাপ। তাই আর জোরাজোরি করেনি রাজু। সোহানের মুড ভালো হলে, নিজ থেকেই রাজুকে সব বলবে।
সোহানের বাবা পেশায় একজন ব্যবসায়ী, এলাকায় ছোট একটা ইলেকট্রনিকস এর দোকান আছে তার। মা গৃহিণী ছিল বটে, তবে গত দুই বছর ধরে ঘরে বসে টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করছেন। শুধু স্বামীর একার আয় দিয়ে এখন আর চলে না। ছেলে-মেয়েরা বড় হবার সাথে সাথে ওদের পড়ালেখার খরচ যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। মেয়েটাও এবার ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠেছে। আগে নিজেই টুকটাক পড়াতো, এখন তো ওর জন্যও আলাদা মাস্টার রাখতে হবে।
সোহান আর বোন সাবা দুইজনই এলাকার একটা বেসরকারি স্কুলে পড়ে। যদিও ওদের বাবা-মা চাইলেই ওদেরকে সরকারি স্কুলে পড়াতে পারতেন। তবে স্কুলটা বেশ দূরে হওয়ায় ছেলে-মেয়ের যাতায়াতের কথা চিন্তা করে, কষ্ট হলেও এই বেসরকারি স্কুলে পড়াচ্ছেন। খরচটা একটু বেশি হলেও নিয়ম-কানুন বেশ শক্ত। তাই স্কুলে দিয়ে বাবা-মা নিশ্চিন্তেই আছেন। স্কুলে ফোন নিয়ে গেলে, ধরা পড়লে সাথে সাথেই বহিষ্কার। আবার শত চেষ্টা করলেও স্কুল পালানোর কোন পথ নেই। তাই এসব দিক বিবেচনা করলে সোহানের জন্য স্কুলটা বেশ ভালো। এই সময়টা, বিশেষ করে উঠতি বয়সের ছেলেদের বিপথগামী হবার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। আর ওদের বাবা-মা তো এত কষ্ট করছেন শুধু ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই।
মাঝেমধ্যে সাবাকে বাসায় একাই যেতে হয় এখন। সোহান ক্লাস নাইনে বিজ্ঞান বিভাগে থাকায়, প্রায় দিনই ওর শেষের পিরিয়ডে ল্যাবরেটরিতে ক্লাস থাকে। তাই এক-দেড় ঘন্টা সময় বেশি থাকতে হয় স্কুলে।
আজও আছে, ফিজিক্স ল্যাব ক্লাস। তবে স্কুল থেকে বাসার দূরত্ব খুব বেশি না। হাঁটলেও মাত্র ছয়-সাত মিনিটের পথ, তাই সাবার খুব একটা অসুবিধা হয়না।
টিফিন পিরিয়ডে সাবা আজ মাঠে সোহানকে দেখতে না পেয়ে, সোহানের ক্লাসে যায়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিয়ে, ভাইকে ক্লাসরুমে একা একা অংক করতে দেখে সে তো রীতিমতো অবাক।
সাবার হাতে থাকা অবশিষ্ট সমুচাটা ভাইকে দিয়ে সে চলে আসে। সামনে পরীক্ষা আছে এই ভেবে আর বিরক্ত করে না সোহানকে।
সোহানের সব বন্ধুই মোটামুটি ভালো ও ভদ্র স্বভাবের। তবে ওদের ক্লাসের ফাহাদের একটু ঝামেলা আছে। এই বয়সেই সিগারেট, এমনকি মদ ও নাকি তার টেস্ট করা হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে ক্লাসেও চুরি করে সিগারেট এনে ওদেরকে দেখায়। ফাহাদের ভাষায় এগুলোকে নাকি স্মার্টনেস বলে। আগের স্কুলেও এমন কি একটা কান্ড করার কারনে টিসি দিয়ে ওকে বের করে দিয়েছিল। বাবার টাকা থাকায় এই স্কুলে সে খুব সহজেই ভর্তি হয়ে যায়। তবে ছেলেটা একটুও শুধরায়নি। সোহান আর রাজু যদিও ওর থেকে দূরে থাকে, কিন্তু ওই কেমন যেন গায়ে পড়ে কথা বলে। মাঝেমধ্যে তো লুকিয়ে বাবার দেয়া দামী ফোন এনেও খুব ভাব দেখায়। কেউ ভয়ে ওর নামে নালিশ করেনা। আবার কেউ কেউ তো ওর এসবকেই স্মার্টনেস মনে করে, নিজেও স্মার্ট হবার জন্য ওর সাথে ঘুরে বেড়ায়। একবার তো সে টিফিনের ফাঁকে মাঠের পিছনে জোর করে রাজুর মুখে সিগারেট ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সোহান এর পর থেকে ওর সাথে আর কথা বলেনা।
ফিজিক্স ল্যাব ক্লাস হচ্ছে এমন সময় হঠাৎ করে কার যেন ফোন বেজে উঠলো। যদিও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তা সাইলেন্ট করে ফেললো, কিন্তু ততক্ষণে ফোনের শব্দ ম্যামের কানে পৌঁছে যায়। ক্লাসরুমে তো ম্যাম ছাড়া অন্য কারও ফোন থাকার কথাই না। অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করার পরেও কেউ যখন স্বীকার করেনি, তখন ম্যাম রেগে গিয়ে সবার ব্যাগ তল্লাশি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সবাই খুব ভালো করে জানলেও কেউ ভয়ে মুখ খোলেনি।
এদিকে সোহানেরও চোখ-মুখে ভয়ের ছাপ। মনে মনে দোয়া পড়ছে যেন ওর আগে ফাহাদের ব্যাগ চেক করা হয়।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়না। ম্যাম সোহানের দিকেই আগে আসে।
বিশ মিনিট পরে…
ফিজিক্স ম্যাম, সোহান, ফাহাদ আর ওদের দুজনের বাবা-মা সবাই প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে। স্কুল থেকে ফোন দিয়ে তাদেরকে ডেকে আনা হয়েছে। সাবা ও বাবা-মার পিছুপিছু এসেছে ঘটনা জানতে, তবে সে রুমের বাইরেই অপেক্ষা করছে।
প্রিন্সিপালঃ ফাহাদের ব্যাগের লুকানো পকেটে দামী একটা মোবাইল আর এক প্যাকেট সিগারেট পাওয়া গেছে। তাতে আমি মোটেও অবাক না। ওর আগের ইতিহাস আমার জানা। তবে সবাই একটা সুযোগ ডিসার্ভ করে, আমিও ওকে তাই দিয়েছিলাম। কিন্তু সে আবারও নিজের বাবাকে আর সাথে আমাকেও হতাশ করেছে৷ আমরা ওকে এই মূহুর্তেই টিসি দিয়ে দিব। কিন্তু সোহানের ব্যাপারটায় আমি খুব মর্মাহত হয়েছি। ভাবতেই পারছিনা ও এটা কি করেছে, কেন করেছে?
সোহানের বাবাঃ কি করেছে, একটু খুলে বলুন স্যার? আমরা কিছুই বুঝতে পারছিনা।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ ওর ব্যাগে একটা কাপড়ের ছোট পোটলা পাওয়া গেছে। তাতে পঞ্চাশ, বিশ, দশ, পাঁচ, এমনকি দুই টাকার নোট ও আছে। সব মিলে প্রায় এগারো’শ টাকার বেশি। ধারণা করা হচ্ছে সে আজ টিফিন পিরিয়ডে ক্লাসে একা থাকার অভিনয় করে, সবার ব্যাগ থেকে এগুলো চুরি করেছে। আসলে ব্যাগ থেকে দশ-পাঁচ টাকা হারিয়ে গেলে কার অত খেয়াল থাকে। যদিও ধরা পড়ার পর সে তার ব্যাংক ভাঙার গল্প সাজিয়েছে। কিন্তু আপনারাই বলুন, ব্যাংক ভাঙলেও সে কি জন্য এতগুলো টাকা স্কুলে নিয়ে আসবে?
সোহানের মাঃ (সোহানের গালে একটা চড় লাগিয়ে) আমার ছেলে চোর!
প্রিন্সিপালঃ আমাদের ধারণা, এটা তার প্রথমবার না।কোন চোরকে তো আমরা স্কুলে রাখতে পারিনা, তাই আমরা ওকে টিসি দিতে বাধ্য হচ্ছি। খুবই আফসোসের ব্যাপার, ওর ছোটবোন গতকাল ট্যালেন্টপুলে বৃত্তির রেজাল্ট শুনিয়ে আমাদের গর্বিত করলো। আর ও কিনা চুরি করে আপনাদের, আমাদের, এমনকি ওর ছোট বোনের মাথাটাও নিচু করে দিল।
হাতে ভাঙা একটা মাটির ব্যাংকের টুকরোগুলো নিয়ে, হাঁপাতে হাঁপাতে সাবা প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকলো।
সাবাঃ স্যার এগুলো ভাইয়ার টাকা, ভাইয়া মিথ্যা বলেনি। আমি আজ স্কুল থেকে বাসায় ফিরে ভাইয়ার টেবিলের ফাঁকে এটা ভাঙা অবস্থায় পাই। ভেবেছিলাম ও বাসায় ফিরলে ভাঙার কারণ জানতে চাইবো। এটা সত্যিই ভাইয়ার ব্যাংক। গত একবছর থেকে ভাইয়া এতে টাকা জমাচ্ছিলো। একটা গীটার কেনার জন্য, রোজ টিফিনের টাকা থেকে বাঁচিয়ে। কেন ভেঙেছিস ভাইয়া তুই, এখনো তো পুরো টাকা জমে নি?
(সোহান মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছে)
সোহানঃ তুই রোজ স্কুল থেকে ফেরার পথে মার্কেটের একটা দোকানে ঝুলানো বারবি ড্রেসের দিকে তাকিয়ে বলিস, সামনের ঈদে বাবাকে ওটা কিনে দিতে বলবি। ঈদের তো এখনো অনেক দেরি। এদিকে গতকাল তোর বৃত্তির রেজাল্ট দিল, তাই ভাবলাম আমি তোকে ড্রেসটা কিনে সারপ্রাইজ দেই। গতকাল দাম করে আসলাম, বারো’শ টাকা চাইল। ব্যাংকের টাকা আর এই সপ্তাহের হাত খরচের টাকা মিলে হয়ে যাবে। টিফিন পিরিয়ডে ব্যাগ রেখে কোথাও যাইনি, যদি কেউ টাকাটা চুরি করে নেয় সেই ভয়ে।
সবাই মাথ নিচু করে সোহানের কথা শুনছে। সাবার চোখেও পানি ছলছল করছে।
না, সোহানের টিসি হয়নি। উল্টো প্রিন্সিপাল স্যার সোহানের মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক দোয়া দিয়েছেন। তবে এটাও বলে দিয়েছেন, পরবর্তীতে স্কুলে আর এত টাকা না আনতে। বাড়ি ফেরার পথে সাবার পছন্দের বারবি ড্রেসটা কিনেই বাড়ি ফেরে ওরা।
সাবা ড্রেসটা পরে আনন্দে সবাইকে ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে। বারবি ড্রেসে মেয়েটাকে একদম পুতুলের মতই লাগছে। সোহানও বোনের এমন খুশি দেখে স্কুলের ওই ঘটনা ভুলেই গেছে।
এক সপ্তাহ পর একদিন স্কুল থেকে একা ফেরার পথে, সাবাও একটা মাটির ব্যাংক এনে বাসায় লুকিয়ে রাখে। ভাইয়ের পছন্দের গীটার যে এবার টাকা জমিয়ে সে কিনে দিবে বলে মনে মনে ঠিক করেছে…..
-সমাপ্ত
ছোট বেলার আনন্দ গুলো খুব সহজেই ধরা দেয়। অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় অপরিসীম খুশী এনে দেয়। তখন অন্যের খুশির জন্য আমরা নিজের খুব পছন্দের জিনিসটাও খুব সহজে বিসর্জন দিতে পারতাম। বড় হয়ে যাওয়ার পর মনে হয় চাহিদা গুলোও দিন দিন বাড়তে থাকে। আর আনন্দ, পরিতৃপ্তি এসব বিষয় যেন অনেক দূরে হারিয়ে যায়।
লেখিকা আপু খুব সুন্দর ভাবে কিশোরকালের ছোট ছোট খুশির ব্যপারটি তুলে ধরেছেন। এমন কি কিশোর বয়সেও যে অন্যকে খুশী করার দায়িত্ব নেওয়া যায় তা খুব সুন্দর ভাবে দেখিয়েছেন।
খুব ভালো লেগেছে গল্পটি। 💜
😍😍আসলে এই গল্পটা সমালোচনা ডিজার্ভ করেনা।আমারও একটা ছোট বোন আছে।সেই অনুভূতি ঝগড়া-মিল এর মধ্য দিয়ে দিন কাটত।তবে গত দের বছর আমি ওর সাথে থাকিনা।
💭💭গল্পটা পড়ার শুরুতে মনে হয়েছিল অতিরিক্ত কথা লেখা হয়েছে এমন ছোট গল্পে।কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন লেখিকা তার লেখার মাধ্যমে।আমার মনে হয় তার লেখা-লেখির অভিজ্ঞতা বেশ ভালো।
{[[গল্পের শুরুটা একটু-আধটু উপন্যাস এর মতো হয়ে গেছে।]]}
☹️☹️তবে সোহানকে প্রাথমিক ভাবে স্যারদের চোর বলাটা অযৌক্তিক ছিল।কারণ যখন সোহান এর ব্যাগ চেক করে টাকাগুলো পাওয়া হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই যেকোন টিচার আগে স্টুডেন্টদের জিজ্ঞেস করবেন যে কারো টাকা চুরি হয়েছে কিনা।এখানে টিচার সেটা করলে সবার উত্তর না হত।সুতরাং এখানেই গল্প খতম।তাই লেখিকা আপু জিজ্ঞাসা বাদের ব্যাপারটা টেনে আনেননি।কিন্তু আমার মনে হয় তার গল্পটাকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে জাওয়ার জন্য অন্য কোন উপায় ভাবা উচিত ছিল।
আর “মাথা” শব্দে আকার দেয়া হয়নি।
☹
❤️এগুলো বাদ দিলে চমৎকার লেখনী ছিল। 😍।
আমার রেটিং হবে ১০ এ ৮।😚
Best wish to Salmina
নাহিদ।
“এক টুকরো সুখ” মূলত ভাই বোনের স্নেহ ভালোবাসা সম্বলিত একটি ছোটগল্প। এ গল্পের মূল চরিত্র “সোহান” নবম শেনীর ছাত্র ও তার ছোট বোন সাবা একই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।তারা বেড়ে উঠেছে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে।দুজনেই বেসরকারি স্কুলে পড়ার কারনে বাবা মা দুজনেই আয় করে সংসার চালায়।এর মধ্যেই সোহানের ছোট বোন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ায় সোহান তার বোন কে উপহার হিসেবে তার বোনের পছন্দের বারবী জামা কিনে দেয়ার জন্য সোহানের গীটার কেনার জন্য মাটির ব্যাংক এ জমানো টাকা দিয়ে জামাটি কেনার কথা ভাবে।তাই সে ব্যাংক ভেংে টাকা একটা পুটলি তে বেধে ব্যাগে রাখে এবং ব্যাগটি খুব যত্নে নিজের কাছে রাখে।সেদিন ই সোহানের ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলেটি ফোন নিয়ে আসে এবং ক্লাসে ফোন বেজে উঠায় ম্যাডাম সবার ব্যাগ চেক করে তখন ই সোহানের ব্যাগে এতগুলো খুচরো টাকা পেয়ে তার বাবা মা কে খবর দিয়ে আনা হয় প্রিন্সিপাল এর রুমে বিচার করার জন্য।সোহান সব সত্যি কথা খুলে বললেও টিচার রা সবাই ভাবে সে বানিয়ে বলছে তাই তাকে টিসি দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখনি বোন সাবা মাটির ব্যাংক ভাংার টুকরো গুলো এনে সবাইকে দেখালে সব সত্যি পরিষ্কার হয়ে যায় যে সোহান সাবা কে উপহার দেয়ার জন্য জমানো টাকা গুলো ব্যাগে করে নিয়ে আসে।তারপর সবাই মিলে সেই বারবী জামা কিনে খুশি মনে বাসায় ফিরে এদিকে সাবা ও লুকিয়ে একটি ব্যাংক কিনে ভাই এর জন্য গীটার কিনার উদ্দেশ্যে টাকা জমানো শুরু করে।
এভাবেই ভাই বোনের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও স্নেহের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত দিয়ে একটি সুখী সমাপ্তি হয় গল্পটির।
“এক টুকরো সুখ” দুই ভাই বোনের ছোট্ট ভালোবাসার গল্প।গল্পের মূল চরিত্র সোহান নামের এক কিশোর। সোহানের মধ্যে আমরা ভদ্র ও পরিবারের প্রতি ভালোবাসা লালন করা এক মানুষের প্রতিফলন দেখতে পাই। এই বয়সের ছেলেরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিপথগামী হলেও সোহান বিপথগামী হওয়া থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করেছে সে বর্ণনা খুব সুন্দরভাবেই দিয়েছেন লেখিকা।
একজন ভাইয়ের কাছে তার বোনের শখ কতটা গুরুত্বপূর্ণ তার খুব সুন্দর উদাহরণ পাঠকরা দেখতে পাবেন এই গল্পে।একজন শৃঙ্খল ছাত্র কি এমন অপরাধ করল সেই কাহিনিইই শেষ পর্যন্ত পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম।
গল্পের ইতি টেনেছেন লেখিকা খুবই সাবলীল ভাবে।গল্পের শেষে এসেই গল্পের নামকরণের যথার্থতা টের পাওয়া যায়। গল্পের শেষে এসে পাঠক আসলেই এক টুকরো সুখ পাবেন।
ব্যক্তিগত রেটিং ৪.৫/৫
গল্পটার নামটা পড়েই মনের মধ্যে একটা সুখ সুখ ভাব চলে এসেছে। খুবই সুন্দরভাবে দুই ভাই বোনের ভালোবাসা প্রকাশ ফুটে উঠেছে এই গল্পে। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা প্রতিটি শিশুর জীবনে এমন হাজারো গল্প লুকায়িত থাকে। হাজারো স্বপ্নের ভিড়ে তারা একটু একটু করে কাছের মানুষের স্বপ্ন পূরণের, জন্যে আনন্দিত করার জন্য নিজের স্বপ্নের কথা ভুলে যায় , সেই উদাহরণ কি খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখিকা এই গল্পে। আমার এই গল্পটি খুবই ভালো লেগেছে । ধন্যবাদ লেখিকাকে এত সুন্দর একটি সুখের অনুভূতি উপস্থাপনের জন্য।
কিশোর বয়সে অনেক কিছু কিনতে মন চায়, অনেক কিছু করতে মনে চায়। কিন্তু সবসময় সবকিছু পাওয়া হয় না। তখন একটাকা দুইটাকা করে টাকা জমিয়ে জমিয়ে পূরণ করতে হয় মনের সেই কাঙ্ক্ষিত মনোবাসনা।
ছোটবেলায় আমিও এই কাজগুলো করতাম আর সেই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি হাতে পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকতাম। “এক টুকরো সুখ” গল্পের সোহান চরিত্রের মধ্যে যেন আমার সেই ছোটবেলার একটা প্রতিচ্ছবি প্রত্যক্ষ করলাম। ফলে, গল্পটি পড়ার মাধ্যমে যে পুরাতন সেই স্মৃতি রোমন্থন করার সুযোগ পেলাম।
কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে লেখিকা উপসংহার যেভাবে টেনেছেন, তাতে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলাম। কি অসহায় অবস্থার মধ্যে সোহান পতিত হয়েছে, সেটা একমাত্র সোহানের মতো ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারবে না।
সেই সাথে এই গল্পে ভাই-বোনের স্নেহভালোবাসাও যেন মুগ্ধ করে।
সর্বোপরি লেখিকা যেভাবে ঘটনার দৃশ্যপটগুলো বর্ণনা করেছেন, তাতে আমার মনে হয়ে বাস্তবতার সাথে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আর ছোটগল্প রচনার নিয়ম হলো, এমনভাবে ইতি টানতে হবে যেন মনে হয়, শেষ হয়েও হলো না শেষ। মনে হবে যেন তারপর আরও কিছু আছে। লেখিকা এই নিয়ম সার্থকভাবে অনুসরণ করে গল্পের ইতি টেনেছেন, যা প্রশংসার দাবি রাখে।