এই গল্পটা যখন থেকে শুরু, তখন আমি কলেজ পাস করে ভার্সিটিতে গিয়েছি মাত্র।
নতুন নতুন ভার্সিটিতে গিয়ে আমার দফারফা অবস্থা। একে তো ঢাকার বাইরে কঠিন জীবন, অন্যদিকে খাবারে অসম্ভব ঝাল। আমি সারাজীবন থেকে এসেছি ঢাকায়, মায়ের হাতের রান্না খেয়ে। এখানকার ঝালে আমি না পারি খেতে, না পারি সহ্য করতে। তার উপর একাডেমিক প্রেশার, আমার তখন মন চায় সব ছেড়েছুড়ে ঢাকা চলে যাই, পায়ের উপর পা তুলে পপকর্ন খেতে খেতে মুভি দেখি। সে সময়টায় আমার মনে হচ্ছিল, আমি সাঁতার জানি না, অথচ আমাকে মাঝ নদীতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এইরকম কঠিন একটা সময়ে আমার পরিচয় হলো হাসান ভাইয়ের সাথে।
ভার্সিটিতে এসে আমার যতগুলো আজব আজব মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম মানুষ হলেন এই হাসান ভাই। হাসান ভাইয়ের ট্রেডমার্ক ছিলো, উনি কিছু হলেই বলতেন, “প্যারা নাই চিল!”
উনার সাথে পরিচয়ের ঘটনাটা একটু খুলে বলা যাক।
এক রাতে হোটেলে বসে ভাত খাচ্ছি। ঝালে চোখমুখ লাল হয়ে আছে। কেঁদে ফেলবো- এমন এক অবস্থা। হুট করে দেখি পাশের চেয়ারে কে যেন এসে বসেছে। চোখে পানি থাকার কারণে বুঝতেও পারছি না, মানুষটা কে।
হুট করে মানুষটা বললো, “কিরে ব্যাটা কাঁদস কেন? কেউ র্যাগ দিসে নাকি তোকে?”
এটা শুনে আমি চোখ মুছে তাকালাম। দেখলাম, ফর্সামতো গোলগাল একখানা মুখ, জীর্ণশীর্ণ শরীর। থুতনীতে কয়েকদিনের না কামানো দাড়ি। হাসিহাসি মুখ।
আমি থতমত খেয়ে বললাম, “না ভাই, আসলে…”
ভাই আবার বললো, “বুঝছি তোর বাপ-মায়ের কথা মনে পড়তেছে। প্যারা নাই চিল। তুই ফার্স্ট ইয়ার না? আয় চা খাই।”
উনাকে আমি বলতেও পারলাম না যে ঝালে আমার অবস্থা খারাপ। আমি শুধু চুপচাপ মাথা নাড়লাম।
সেই থেকে ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় শুরু। ভাই যেদিকে যাবে, আমিও সেদিকে যাবো। এইটা আসলে কেন হতো আমি ঠিক জানি না। হতে পারে, ভাইয়ের ব্যক্তিত্ব আমাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতো। কিংবা আমাদের স্বভাবেও হয়তো কিছু মিল ছিলো।
আমি যখনই পড়াশোনায় কোনো কূলকিনারা করতে পারতাম না, ভাইকে ফোন দিতাম। ভাই বলতো, “প্যারা নাই চিল। আয় শর্মা খায়া আসি।”
ব্যস, আমরা শর্মা খেতাম, আর আমি আমার কোর্স টিচারের নামে একগাদা অভিযোগ দিতাম। ভাই সব শুনে হাসিমুখে বলতো, “প্যারা নাই চিল। সব হালার ভাই সেইম। রুমে গিয়া ভালো কইরা পড়িস।”
ভাইয়ের অনুপ্রেরণা শুনে আমি পটে যেতাম। হলে এসে কুত্তার মত পড়াশোনা শুরু করতাম।
শোনা যায়, ভাইয়ের এই ডায়ালগ শুধু সিনিয়র-জুনিয়র না, স্যারদের কানেও গেছে। সেন্ট্রাল ভাইভাতে ভাইকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, “বলো দেখি ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমে হারমোনিক্স কি?”
ভাই উত্তর দিয়েছিলো, “ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি চালু করা হইলে নানা রকম সাউন্ড বের হয়। এইগুলারে হারমোনিক্স বলে।”
তখন স্যার বললেন, “এই ছেলে তুমি কি বলছো এসব?”
ভাই তখন আবার বললেন, “স্যার, প্যারা নিয়েন না চিল। আমি জাইনা আইসা কালকেই আপনারে জানাবো।”
এই হচ্ছে আমাদের হাসান ভাই।
হাসান ভাইয়ের একটা অদ্ভুত গুণ ছিলো, উনি কোনোকিছুতেই রাগতেন না। কিছু হলেই হাসিমুখে বলতেন, আচ্ছা প্যারা নাই চিল। নেক্সট টাইম।
একবার এক ছেলে ভাইয়ের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে কেটে পড়েছিলো। হলে যারা থাকে তাদের জন্যে দুই হাজার টাকাও অনেক। ভাই সেটা জানার পর উদাস মুখ করে বলেছিলেন, “আচ্ছা প্যারা নাই। সিগারেট খাওয়া দুই মাস বন্ধ রাখলেই দুই হাজার টাকা উসুল হয়া যাবে। আয় শেষবারের মত একটা বিড়ি ধরায় নেই। অনেক ফিল নিয়া টানবো।”
সেদিন হাসান ভাইয়ের সিগারেট টানা দেখে আমার মনে হলো, ফাঁসির আসামীর কাছে তার শেষ খাবার কতটা প্রিয়। জানে, জীবনে এটাই তার শেষ খাওয়া…
মজার ব্যাপার হচ্ছে, পরবর্তী দুই মাস হাসান ভাই সত্যি সত্যিই সিগারেটের ধারেকাছেও যান নি। সেদিন আমি বুঝেছি, কতটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মানুষ এই হাসান ভাই।
এমন সময় একটা ঘটনা ঘটলো।
আমি জীবনে প্রথমবারের মত প্রেমে পড়লাম।
ভার্সিটি জীবনের প্রথম প্রেম হলো চায়না মালের মত। যেটা টেকে, সেটা সারাজীবন টেকে। যেটা টেকে না, সেটা ছয় মাসেই অক্কা পায়। আমার বেলায় হলো দ্বিতীয়টা।
প্রথম এক মাস মেয়েটার সাথে চোরাচাহনি, প্রেমে প্রেমে পড়ার অনুভূতি। তারপর দুই মাস উথাল-পাতাল প্রেম। পরের এক মাস সেই অনুভূতি জিইয়ে আসা। পরের এক মাসে আস্তে আস্তে দূরত্ব বাড়া। পরের মাসে যেটা অবধারিত ছিল, ব্রেক-আপ।
এই ছয়টা মাসে আরেকটা মানুষের সাথে আমার দূরত্ব বেড়েছিল, তিনি হলেন হাসান ভাই। প্রেমে পড়া থেকে শুরু করে পুরোটুকু সময়ই আমি আমার প্রেমিকাকে দিতাম। আমার যে একটা ভাই-কাম-বন্ধু ছিলেন হাসান ভাই, আমি পুরোপুরি ভুলেই গিয়েছিলাম।
ব্রেক-আপের পর আমার সবার আগে মনে পড়লো হাসান ভাইয়ের কথা।
লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে ভাইকে ফোন দিলাম। ভাই ফোন ধরেই তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে বললেন, “আরে ব্যাটা তুই এতদিন পর! আয় শহীদ মিনারে আয়, অনেকদিন আড্ডা দেই না তোর সাথে। দশ মিনিটের মাঝে আসবি। কুইক।”
গেলাম শহীদ মিনারে। সে সময় ছিল শীতের রাত। ঘন কুয়াশা। তার মাঝে হাসান ভাই একটা চাদর মুড়ি দিয়ে বসে সিগারেট টানছেন।
আমি ভাইয়ের পাশে গিয়ে বসলাম।
ভাই বলা শুরু করলেন, “তোর বলা লাগবে না কিছু। আমি জানি রে ব্যাটা, সব জানি। তোর জায়গায় একদিন আমিও ছিলাম যে! প্যারা নাই চিল। এমন হয়। আমার সাথেও হইসে। তোর সাথে হবে। তোর জুনিয়রের সাথে হবে। এইটা অবধারিত। এই ক্যাম্পাসে এগুলাই গল্প। এগুলাই ক্যাম্পাসের কাহিনী। তুই কি মনে করছিস শুধু কয়েকটা ইটের বিল্ডিং আর কতগুলা ছাত্র-শিক্ষক দিয়া এই ক্যাম্পাস গড়ে উঠে? না রে ব্যাটা, এই ছোট ছোট কাহিনী দিয়াই একটা ক্যাম্পাস গইড়া উঠে।”
সেই রাতে ভাই আমাকে তাঁর প্রেম কাহিনী শুনালেন। কিভাবে প্রেমে পড়লেন, কিভাবে এক বিসিএস ক্যাডার এসে সেই প্রেমিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলো। মেয়েটার বিয়ে হওয়ার এক বছর পর ভাই জানলেন যে তার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছয় মাস বিরহে থাকার পর ভাই ডিসিশন নিলেন, আর কোনো কিছু নিয়ে তিনি আর পেইন খাবেন না। যতই প্যারা হোক, ভাই চিল থাকবেন।
সেই রাতে আমরা দুই ভাই গলা জড়াজড়ি করে অনেক কাঁদলাম। তারপর রউফের দোকানে গিয়ে কাচ্চি খেলাম। ভোর বেলা আমরা যে যার যার রুমে গিয়ে ঘুমায় পড়লাম।
এরপর থেকে ভাই হয়ে গেলেন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ক্লাস শেষে সারাদিন-সারাক্ষণ ভাইয়ের সাথে আড্ডা দিতাম। ক্যাম্পাসে আমাদের নাম হয়ে গেলো ‘মানিকজোড়’। ব্যাচমেট না হয়েও আমাদের মাঝে যে বন্ধুত্ব ছিলো, সেটা দেখে সবাই হিংসে করতো।
সুখের সময় চিরদিন স্থায়ী হয় না। আমাদের বেলায়ও হলো না। হাসান ভাই পাশ করে বের হয়ে গেলেন। এবার ভাইয়ের টার্গেট বিসিএস। নিজের বাসায় গিয়ে ভাই পড়াশোনা শুরু করলেন। ভাই পড়লেন। খুব পড়লেন।
তারপর পরীক্ষা হলো। অনুমিতভাবেই ভাই প্রিলি-রিটেনে টিকে গেলেন। এরপর আসলো ভাইভা।
ভাইভার আগে আমি হাসান ভাইকে বললাম, “ভাই ভয় পাইয়েন না। আপনার হয়ে যাবে দেখে নেবেন। খালি ভাইভা বোর্ডে প্যারা নাই চিল- এই কথাটা বইলেন না প্লিজ। দোহাই লাগে।”
ভাই বললো, “ধুর ব্যাটা। আমি কখনো এগুলা নিয়া প্যারা নেই নাই, নিবোও না। তুই যখন বলছিস, যা, বলবো না এই কথা। ভাইভা শেষে তোরে কল দিমু নি, থাকিস।”
হাসান ভাই ভাইভা দিলেন। পুরো ভাইভাতে উনি একটিবারও ‘প্যারা নাই চিল’ কথাটা বললেন না। এটা অবশ্য উনার মুখ থেকে শোনা, সত্য-মিথ্যা জানি না।
ভাইভারও রেজাল্ট দিলো। ভাই শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন।
আস্তে আস্তে হাসান ভাই তার ক্যারিয়ারে বিজি হয়ে গেলেন। সবার সাথে চিল মুডে থাকা, আর সবাইকে কনভিন্স করে ফেলার যে ক্ষমতা- সেটা দিয়ে ভাই আস্তে আস্তে উপরে উঠে গেলেন। কিন্তু আমার সাথে ভাইয়ের যোগাযোগ এতটুকু কমলো না। আমরা সেই আগের মত বন্ধুই রয়ে গেলাম।
এবার শেষের কাহিনী বলি।
ভাই এখন শিক্ষামন্ত্রীর খুব কাছের লোক।
সেদিন হাসান ভাইয়ের সাথে একটা বড় রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়াদাওয়া করছিলাম। কয়েক বছর আগে এই হাসান ভাইয়ের সাথেই সকালে চা খেয়ে থাকতাম, নাস্তা খাওয়ার পয়সা পকেটে থাকতো না। আজ আমরা পাঁচ তারকা হোটেলে খাচ্ছি।
খেতে খেতে ভাই বললেন, “জানিস আমরা তো শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতেছি।”
আমি খেতে খেতে বিষম খেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, “কি পরিবর্তন ভাই?”
ভাই বললেন, “নাইন-টেনে সাইন্স কমার্স আর কোনো ভাগ নাই। সব এখন এক কাতারে। ইন্টারে উঠলে সব ভাগাভাগি হবে। জোস না ব্যাপারটা?”
আমি বললাম, “জ্বী ভাই। এটাই তো উচিত।”
ভাই আবার বললেন, “কিন্তু আমি তো একটা পাকনামি কইরা ফালাইসি মাঝখান দিয়া।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আয় হায়। কি করেছেন ভাই?”
ভাই কানের কাছে এসে বললেন, “তুই তো জানস আমার একটা মুদ্রাদোষ আছে। আমি কথায় কথায় ‘প্যারা নাই চিল’ বলি।”
আমার গলায় খাবার আটকে গেছে। সেই অবস্থায় জিজ্ঞেস করলাম, “তারপর?”
ভাই বললেন, “শিক্ষামন্ত্রীরে সেইদিন ফুঁসলাইলাম। বললাম, স্যার সব সাবজেক্ট চেঞ্জ করবেন, সমস্যা নাই। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের মানসিক অবস্থাও তো চিন্তা করতে হবে। এইজন্যে একটা সাইকোলজিক্যাল সাবজেক্ট ঢুকায় দেন। সবাই যাতে এই সাবজেক্ট পড়ে ভালো থাকে।”
আমি পানি খাচ্ছি। তবুও গলা দিয়ে খাবার নামছে না। জিজ্ঞেস করলাম, “তারপর?”
ভাই বললেন, “আমার আইডিয়া শিক্ষামন্ত্রীর খুব পছন্দ হইসে। আমি বলসিলাম বিষয়টার নাম রাখতে ‘প্যারা নাই চিল’। কিন্তু নামটা কেমন জানি হয়ে যায়।”
শেষমেশ খাবার গলা দিয়ে নেমেছে। আমি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে জিজ্ঞেস করলাম, “এখন? শেষমেশ?”
ভাই আমার কানের আরো কাছে এসে বললেন, “শেষমেশ আমরা সাবজেক্টটার নাম রাইখা দিসি ‘ভালো থাকা’। আমি শিক্ষামন্ত্রীরে বলসিলাম তামাশা কইরা, উনি সিরিয়াস ভেবে নিসে। কি আর করা। শুকরিয়া আদায় কর, তোর-আমার এইসব জিনিস পড়া লাগবো না। এখন খা। যা হবার হবে। প্যারা নাই, চিল!”
– Shakinur Alim Joy
Send private message to author
কলেজ জীবন শেষে ভার্সিটি জীবনে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়াটা আসলেই কষ্টকর সবার জন্য , আর যদি সেটা হয় নিজ বাসভুমি থেকে বহুদূরে।তাছাড়া পরিবার থেকে দূরে এবং নিজস্ব স্বাভাবিক জীবন -যাত্রায় ভিন্নতা ব্যাপারটাও লেখকের ভাষায় সাতার জানি না অথচ মাঝ নদীতে ছেরে দেয়ার মতই ।
এসময় পরিপূর্ণতা ,উৎসাহ যোগান দেয়ার জন্য প্রয়োজন একজন ভালো বন্ধু ।হয়ত এ গল্পটির মতই ব্যাচমেট নয়, তবে একজন ভাল বন্ধু যে ভাগাভাগি করে নিবে সকল সুখদুঃখ গুলোকে ।
হয়ত নতুন করে গুছিয়ে নিতে শেখাবে ,লক্ষে পৌছাতে উদ্দুদ্ধ করবে ।যে হয়ত চাইলেই আমাদের মন খারাপ দূর করতে পারবে ,একটু হাসতে শেখাবে ।
লেখকের গল্পে এরকম আরও কিছু বিষয়ের প্রতিফলন রয়েছে যেগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারবো দৈনন্দিন জীবনে একজন বন্ধুর প্রয়োজনীয়তা কতটা অপরিসীম ।
অতি বাস্তবিক চিত্র সম্পন্ন এ গল্পটি পরলে পাঠক-পাঠিকা নিজ জীবন খুব সহজেই উপলদ্ধি করতে পারবে ।লেখকের ”প্যারা নাই চিল ” গল্পে উল্লেখিত হাসান ভাইয়ের মতো একজন শ্রেষ্ঠ বন্ধু আমাদের সবার জীবনেই প্রয়োজন ,গল্পটি পরে সবাই এটাও উপলদ্ধি করতে পারব ………………………
কলেজের ছোট ওয়েদার থেকে ভার্সিটির ওয়েদারে খাপ খাওয়ানো টা সত্যিই বেশ মুশকিল। পরিবারের সংস্পর্শ থেকে প্রথম বার দূরে কোথাও গিয়ে থাকা, একাডেমিক
পড়াশুনায় মন বসানো বেশ কষ্ট।সাথে মায়ের হাতের রান্নার পরিবর্তে তেল ঝাল খাবার খাওয়া।
ঠিক এমন সময় টাতেই সিনিয়র কেউ একজন মানুষ থাকে যে ক্যাম্পাসে সবার সমস্যায় সমাধান দেয়। নিজের মনের কথা বলার আগেই ভাই সবটা বুঝে নেয়। অস্বস্তিকে মনের প্রশান্তিতে বদলে দেয়। হুট করে করা ভুল গুলোকে নিয়ে মাথা না ঘামানোর মন্ত্র দেয়।
এই টাইপ বড় ভাই গুলাই মানে জোশ একটা মানুষ, শান্তির একটা জায়গা। খোলামেলা মনে যা কিছু তাই বলা যায় একাডেমিক, ক্যাম্পাস, ব্যাক্তিগত সব কিছু।
বড় ভাই এরকম সবার জীবনেই থাকে। উনি যেমন একটা পাওয়ার হাউজ।
এসব ভাইগুলো ক্যারিয়ার স্টাবলিশ হওয়ার পরও জুনিয়রদের ভুলে না। তাদের পাশে থাকেন, মনোবল দেন সবসময়।
এরকম ভাই বন্ধুত্বের বন্ধনে বহুদূর যায়।
“প্যারা নাই, চিল!” গল্পে লেখক গল্প কথক ও হাসান ভাই এর মাধ্যমে বাস্তবতার এক চিত্র তুলে ধরেছেন। হোস্টেল লাইফের নানা ঘটনা তুলে ধরেছেন। এ গল্পের মূল আকর্ষণ হল “প্যারা নাই, চিল! মুডে থাকা মানুষগুলোর হাত ধরে কীভাবে শিক্ষা ব্যাবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসে।
কোন এক বিশেষ মানুষের সাথে পরিচিতি লাভের মাধ্যমে হোস্টেল লাইফের একাকিত্ব, মা-বাবা কে ছেড়ে থাকা বা মায়ের হাতের রান্নাকে মিস করা কিংবা ভার্সিটির প্রথম প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়ার কষ্টগুলো ভুলে থাকার এক অনন্য গল্প কথা এটি ।
গল্প কথকের জীবনে কী কী কষ্ট ছিল, হাসান ভাইয়ের সাথে পরিচিতি লাভের মাধ্যমে কীভাবে তা লাঘব হল, আর কীভাবেই বা শিক্ষা ব্যাবস্থায় পরিবর্তন আসল তাই ছিল গল্পের মূল উপজীব্য।
সবকিছু মিলিয়ে “প্যারা নাই, চিল!” গল্পটি খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক “শাকিনুর আলিম জয়”।
থিমটা ভালো ধরেছেন।উপস্থাপন ও চমৎকার তবে আরো ভালো করারও সুযোগ ছিল।শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে উঠে আসা বিষয়টি খুব ভালোলেগেছে।এছাড়াও কাহিনী বিন্যাস সুন্দর ছিল।
তবে কিছু অসংগতি আমার চোখে পড়েছে।
“আমাকে তাঁর❌ প্রেম কাহিনী শুনালেন। ” এখানে বানানটা তার✅ হবে।
“একটা বিড়ি ধরায়❌ নেই”এখানে ধরাইয়া✅ হবে।
কিছু জায়গায় একই শব্দ পরপর দুইবার হয়ে গেছে। (প্রেমে প্রেমে পড়ার অনুভূতি)
গল্পের কেন্দীয় চরিত্র হাসান ভাই প্রথম ভাইভাতে যে ধরনের উত্তর দিয়েছে তাতে তাকে আদুভাই টাইপ মনে হয় কিন্তু শেষে সে প্রথমবারেই একজন বিসিএস ক্যাডার হয়ে যায়।একজন ক্যাডারের প্রথম ভাইভা হিসেবে যথাযথ হয়নি।সংলাপ গুলোকে অর্থবহ করে মুদ্রা দোষের ব্যপারটা তুলে ধরলে ভালো হতো। আমরা জানি পারিশ্রম ছাড়া সফলতা আসে না কিন্তু হাসান ভাইয়ের চরিত্রে কোথাও পারিশ্রমের দিকটা পাওয়া যায় নি। বরং প্যারা নাই চিল কথাটা অলসতায় ভরপুর। এক্ষেত্রে পারিশ্রমীরা একটু আশাহত হবে।
আর একটা বিষয় হলো হাসান ভাই দুইমাস সিগারেট না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে শেষ বিড়ি ধরালে লেখক সেক্ষেত্রে বলেন “ভাইয়ের সিগারেট টানা দেখে আমার মনে হলো,ফাঁসির আসামীর কাছে তার শেষ খাবার কতোটা প্রিয়।”
এখানে বিড়ি নাকি সিগারেট?
এক্ষেত্রে লেখকের উপমাটা আমার মানানসই মনে হয় নি। কারন লেখকও জানতেন ঐটা হাসান ভাইয়ের শেষ খাওয়া নয় এবং দুইমাস পরে তিনি সত্যই সিগারেট খান।
সবশেষে,এগুলো একান্ত আমার অভিমত।এই মতের বিরুদ্ধে ভিন্নমত থাকবে,এটাই নিয়ম।
গল্পটি পড়ে ভালো লাগলো।লেখকের জন্য শুভকামন রইলো।❤
প্যারা নাই চিল কথাটার মাঝে আসলে একটা চিল ভাব আছে।আমরা প্রত্যেকেই নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে একটু হিমশিম খাই,,কিন্তুু হাসান ভাই এর মত চিল ভাই + বন্ধু থাকলে কোন ব্যাপারই না।যেকোন পরিবেশে মানাই নেওয়া যাই।গল্পের কন্সেপ্ট টা অনেক ভাল ছিল,সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখা গল্প অনেক কম লেখই লেখে।
অসাধারণের উপর যদি কোনো গল্প থাকে তবে তা এ গল্পটি। গল্পের খুত ধরা তো দূরে থাক গল্পের প্রত্যেক লাইনই ছিল বিশেষ কিছু। এটা যে বাড়িয়ে বলা না তা গল্পটি পড়লে ডে কেউই বুঝবে। গল্পের লেখার ধরন, গল্পের ধারাবাহিকতা, গল্পশৈলী সবকিছুই ছিল চমৎকার। গল্পে যেমন হাসি ছিল, তেমন ভার্সিটি লাইফের জীবন, শান্তনা সাহস দেওয়ার মতো একজন বড় ভাই, একই ব্যাচের না হলেও সিনিয়র ও জুনিয়র দুইজনের বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়া সবই আছে। গল্পটি যার কারণে অসাধারণ হলো তিনি হাসান ভাই। তার বিখ্যাত ডায়লগ প্যারা নাই চিল। তিনি গল্প কথকের ভালো বন্ধু হয়ে গেলেন। তার জীবনের এ প্যারা নাই চিলই তাকে উঁচুতে নিয়ে গিয়েছে। তিনি হয়ে গেছেন বিসিএস ক্যাডার। শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছের মানুষ হয়ে গেলেন।
গল্পটি এককথায় ভার্সিটিতে একজন নতুন ছাত্র যেমন একজন বড় ভাই চায় তার প্রমাণ। আর মন ভালো করার একটা কার্যকরী ঔষধ বলা যায় গল্পটিকে।
“প্যারা নাই চিল” গল্পটা একজন ছাত্রের শিক্ষাজীবন ও ব্যক্তিজীবনের উত্থান পতনের কিছু স্বাভাবিক চিত্র তুলে ধরেছে।প্রতিটা শিক্ষার্থীর জন্য কলেজ জীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পদার্পণ করা একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীইই পারিবারিক পরিবেশ থেকে দূরে সরে যায় এ সময়টায়।খাপ খাইয়ে নিতে হয় ভিন্ন পরিবেশ ও ভিন্ন জীবনপদ্ধতির সাথে।এ সময় তাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠে এমন কিছু মানষের সাথে যারা পরবর্তী জীবনেও প্রভাব ফেলে যায়।গল্পের লেখকের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় নি। ঝাল খাবারে অনভ্যস্ত লেখকের মন যে তখন পাগলা ঘোড়ার মত ঘরে ছুটে যেতে চাচ্ছে তা লেখক বর্ণনা করেছেন খুবই সাবলীল ও স্পষ্ট ভাষায়। এমনই দুর্দিনে হাসান ভাই লেখকের জীবনে দেবদূত হয়ে এসেছেন। লেখকের বর্ণনা মতে বুঝা যায়,হাসান ভাই এমন একজন মানুষ যিনি কিনা অহেতুক দুশ্চিন্তা করেন না এবং তার আশেপাশের মানুষকেও ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করেন।”প্যারা নাই চিল” হাসান ভাইয়ের মুদ্রাদোষ বলা চলে।এ কথাটার মাঝে হাসান ভাইয়ের চরিত্রের আলস্য দিকটি ফুটে উঠে।এমন একজন অলস ব্যক্তি কি করে একবারে বিসিএসে উত্তীর্ণ হন সেটাই অবাক হওয়া বিষয়।আরও একটা অসামঞ্জস্যতা লক্ষণীয়- লেখক বলেছেন হাসান ভাইয়ের ভার্সিটি পাশ করার পর এবং চাকরি হওয়ার পর সবাই যে যার জীবনে অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েন।এ থেকে পাঠকের ধারণা হতে পারে,তাদের মধ্যে বুঝি আগের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটি আর নেই।কিন্তু লেখক পরের বাক্যেই বলেন,তাদের সম্পর্ক আগের মতই আছে।
গল্পে প্রথম প্রেমের যে ধারণা দেওয়া হয়েছে,তা গল্পে মানানসই।ভার্সিটি জীবনের গল্পে প্রেম থাকবেনা তা তো হয় না।
লেখকের ব্যবহৃত ভাষা আমাদেরএই প্রজন্মের নিত্যদিনের ব্যবহৃত ভাষাকেই তুলে ধরে।তাই এই গল্প পড়ার সময় মনে হয়েছে কেউ সামনে বসে তার গল্প শোনাচ্ছে।তবে প্রকাশ করার জন্য লেখা গল্পে সাহিত্যের ভাষা থাকাটা জরুরি বলে আমার মনে হয়,লেখক অতিরিক্ত ঘরোয়া ভাষা ব্যবহার করেছেন।
সর্বপরি,লেখার শেষে কোনো একটা চমক থাকবে বলে আশা করেছিলাম।কিন্তু শেষটা হয়েছে অতি সাধারণ এবং খাপছাড়া। অনেক পাঠকের হয়ত মনে হতে পারে,গল্পটা কেন লেখা হয়েছে।লেখক গল্পের শেষটা এমন রেখেছেন যে উনি কি বলতে চেয়েছেন তাই স্পষ্ট নয়। এমন ইতি সম্পূর্ণ গল্পের ইতিবাচকতাকে আড়াল করে ফেলেছে বলে আমার মনে হয়েছে।
ব্যক্তিগত রেটিং ৩/৫
গল্পে হাসান ভাইয়ের চরিত্রটি খুব ভালো লেগেছে।সত্যি যদি সবাই এমন কাল্পনিক হাসান ভাইয়ের মত প্যারা নাই চিল মুডে থাকত তাহলে মন্দ ছিল না।অনেক অশান্ত সময়ে শান্ত থাকা যেত।
গল্পের প্রথম অংশে ছাত্রজীবনের খাপ খাইয়ে নেয়া সম্পর্কে বলে হয়েছে।যা অনেক ছাত্র ছাত্রীর কাছেই বাস্তবিক।
গল্পের শেষ অংশে ভাল থাকা সাবজেক্ট নিয়েও বলা হয়েছে।যা বোধ হয়, বাস্তবিক জীবনে অনুমোদন হলে মন্দ হতো না।
লেখকের লেখায় পরিণত ছোঁয়া আছে।well done.
👁️🗨️💥কয়েকটি বানান ভুল ছিল। একটি ভাল মানের ওয়েব সাইটে এরকম ভুল হলে তো চলবে না। তাছাড়াও এটা ভিজিটর দের জন্য দৃষ্টিকটু।
গল্পের কাহিনী টা একটু দ্রুত এগোচ্ছিল বলে মনে হয়েছে।
যে বিষয়ে লেখা হয়েছে সেটা আরো ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা যেত এবং পাঠকদের মমনোযোগ ধরে রাখতে পারত।
কেন জানি মনে হচ্ছিল লেখক গল্পটি লিখতে গিয়ে একটু তাড়াহুড়ো করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত আর চিল করেই গল্প লেখা উচিত।
ওই বড় ভাইয়ের সাথে কিন্তু আমার চেহারার কাকতালীয় মিল হয়েগেছে।এ ব্যাপারে আমি প্রতিবাদ জানাই।😁
❤️❤️..তবে গল্পটা ভালো ছিল আর ইউনিক আইডিয়া ছিল😍। লেখক কে ধন্যবাদ জানাই এরকম গল্প ফ্রিতে দেয়ার জন্য।
চারু কল্প আর প্যারা নাই চিল এ দুইটা গল্প পড়ে মনে হয়েছে কি জানো একটা মিস করছি। আর নিরস নিরস লাগছিল।
💭অনেক ভাবার পর খুঁজে পেয়েছি যে। গল্পগুলোতে কোন প্রচ্ছদ নেই।প্রত্যেকটা গল্পে কমপক্ষে একটা করে হলেও প্রচ্ছদ দেওয়া উচিত ছিল। আর তা যদি হয় রংতুলিতে আঁকা তাহলে তো কোন কথাই নেই।এতে ভিজিটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ হবে।আর আমাদের মত পাঠকদেরও মন ভরবে।
এই গল্পে ৭/১০ দিচ্ছি।😊
নাহিদ।
‘প্যারা নাই চিল!’ সত্যিই বতর্মানে বহুল প্রচলিত একটি কথা। আসলে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তির বাহানা বলা যায়। আর স্কুল কলেজ কিংবা ভার্সিটিতেই এর ব্যবহার একটু বেশি দেখা যায়।
আমার মতে গল্পটিতে বেশ অনেক কিছু শিক্ষণীয়, যারা ভার্সিটিতে পড়ে, তাদের লাইফের কিছু দিক এখানে তুলে ধরা হয়েছে। যেগুলো নিয়ে সত্যিই অনেক প্যারা খেতে হতে পারে একজন শিক্ষার্থী কে। পড়াশোনার মস্ত সিলেবাস, হঠাৎ করে সব বুঝে উঠতে না পারা, শিক্ষক নিয়ে প্যারা, লাভ লাইফ, হোস্টেল আর হলো খাবার-দাবার নিয়ে সমস্যা। যেটি এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে গেলে মানিয়ে নিতে সবারই কষ্ট হয়।
কিন্তু তার মাঝেও সব মানিয়ে নিয়ে ভালো কিছু করার অনুপ্ররেণা নিয়ে হাসান ভাই এর মতো মানুষ রা আসেন। তারা আসলে পজিটিভ এনার্জী ছড়িয়ে যান। সত্যি বলতে যখন কেউ কোনো কিছু নিয়ে ডিপ্রেশনে থাকে আর তখন কেউ এসে সেই অবস্থায় খানিকটা প্রশান্তির ছোঁয়া দেখায় তখন দেবদূত বলেই মনে হয়, আর অন্তর থেকে একটা বিশ্বাস জন্মায়, যা কিছুই হোক তাঁর কাছে কিছুটা প্রশান্তির উপায় নিশ্চয়ই আছে।
কিন্তু সবশেষে লেখক এই প্যারা নাই চিল কে আবার দাঁড় করালেন প্রশ্নবোধক চিহ্নের স্থলে শিক্ষা ব্যবস্থার নতুন সংস্করণের বিষয়টি যুক্ত করে, এই শিক্ষা ব্যবস্থায় কি ‘প্যারা নাই চিল’ কথাটা পারবে শিক্ষার্থীদের নতুন আশা দিতে!
পরিশেষে, গল্পটি পড়ে আনন্দের সাথে যা শিখতে পারলাম তাহলো, ভয় না পেয়ে দৃঢ় মনোবল রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়া। সাফল্য লাভের পথে বিভিন্ন অন্তরায় থাকতেই পারে, কিন্তু দৃঢ় মনোবল থাকলে হাসান ভাইয়ের মতো জিত অবশ্যই আসবে।
লেখক বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে এবং অনেক সাবলীল ভাষায় গল্পটি উপস্থাপন করেছেন, যা গল্পের মূল ভাব প্রকাশে সফলভাবে ভূমিকা রেখেছে।
প্যারা নাই , চিল! গল্পটা আসলে খুবই সুন্দর !
এখানে খুবই সাবলীল ভাষায় পরিবার থেকে দূরে থাকা এবং বাস্তব জীবনের কিছু কঠিন মুহূর্ত মোকাবেলার কথা প্রকাশ পেয়েছে । আমাদের সবার জীবনে এমন একজন মানুষ থাকে যে আমাদের প্রতিনিয়ত আত্মবিশ্বাসের সাথে চলতে সাহায্য করে। যার ফলে আমরা খুব সহজে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি । জীবনে চলার পথে আত্মবিশ্বাসী সবকিছু। আপনার কাছের মানুষরাই আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। “প্যারা নাই চিল” এই কথাটা আসলে আমাদের চিল করে দেয় আত্মবিশ্বাসী করে তোলে যখন কঠিন মুহূর্তে আমাদের কোন কাছের মানুষ বলে। গল্পটি তে খুবই সুন্দর সহজ ভাষায় সেটা প্রকাশ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে গল্পটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ লেখককে এতো সুন্দর একটি গল্প উপহার দেয়ার জন্য।
ভার্সিটিতে ওঠার পর সবারই কমবেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ, বাবা-মাকে ছেড়ে এসে সম্পূর্ণ অচেনা একটা পরিবেশে যখন আসা হয়, তখন নিজেকে সত্যিই অনেক অসহায় মনে হয়। এরকম অসহায় পরিস্থিতিতে যদি এই গল্পের হাসান ভাইয়ের মত একজন মেন্টরকে পাওয়া যায়, তাহলে খাপ খাওয়ানো অনেক সহজ হয়ে যায়।
এই গল্প থেকে একটা জিনিস শিখলাম যে, জীবনে অনেক বাধাবিপত্তি আসবে। কিন্তু তাই বলে সেটা নিয়ে সারাক্ষণ উদ্বিগ্ন হয়ে থাকা যাবে না। আমরা যদি সারাক্ষণ ব্যথিত হয়ে থাকি কোনো একটি বিষয় নিয়ে, তাহলে তো সম্ভাবনার যে পথগুলো খোলা আছে, সেগুলো মলিন হয়ে যাবে।
ব্রেকাপ হয়েছে? তাই বলে কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়ার কি দরকার? হাসান ভাইয়ের মতো যদি বলা যায় প্যারা নাই চিল, তাহলে কিন্তু অনেক সমস্যা আপনাআপনি সমাধান হয়ে যায়।
আজ থেকে আমিও ভাবছি, আমিও এমনটা করবো।
তবে, এই গল্প থেকে নতুন একটা তথ্য পেলাম। মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যসূচিতে “ভালো থেকো” নামে কোনো সাবজেক্ট অন্তর্ভুক্ত করেছে, সেটা আমি জানতাম না। আমি গল্প পড়ে ভাবছি, গল্পের জন্য হয়তো কাল্পনিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই তথ্যটি। কিন্তু গুগোল করে দেখলাম, আসলেই এরকম একটি সাবজেক্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে, এই সাবজেক্টের নাম “প্যারা নাই চিল” রাখলে কিন্তু ব্যাপারটা বেশ মজারই হতো।
‘প্যারা নাই চিল’ নামক ছোট গল্পে কথক ও তার ভার্সিটির সিনিয়র হাসান ভাই এর ভার্সিটি জীবন ও ব্যক্তি জীবন এর কিছু অংশ প্রকাশ পেয়েছে।গল্পের কথক কলেজ জীবন থেকে সদ্য ভার্সিটি জীবনে পা দিয়েছে।প্রথম দিকে নতুনদের জন্য ভার্সিটি জীবন বেশ কষ্টকর।যেমনটা কথকের জীবনে প্রকাশ পেয়েছে।বাসায় মায়ের হাতের রান্নার বদলে হোটেলের ঝাল রান্না যেন মুখে সয় না তাছাড়াও রয়েছে নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কষ্ট।কিন্তু ভার্সিটি জীবনে কথকের অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হলেও দেখা হয় এক অদ্ভুত মানুষ হাসান ভাইয়ের সাথে।যার জীবনে নেই কোন কিছুর প্যারা।হাসান ভাই তার জীবনকে খুব সাধারণ ভাবে চালিত করে।কোন কিছু পাওয়ার খুব আকাঙ্খা নেই,কারোর প্রতি নেই কোন রাগ।বলতে গেলে জীবন যেভাবে যায় তিনিও সেভাবে যান।তার এই অদ্ভুত সুন্দর জীবনধারা দেখে কথক তারা প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে ও তাকে অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করে।হাসান ভাইয়ের ব্যক্তিত্বই এমন যে সকলে তাকে “প্যারা নাই চিল” ট্রেড মার্ক দেন।ধীরে ধীরে কথক ও হাসান ভাইয়ের বেশ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।ভার্সিটি তে সকলে তাদের নাম দেন মানিকজোড়।কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই কথক সদ্য নতুন প্রেমে ভাসে।তবে সেই প্রেম বেশি দিন যায় না।পাঁচ মাসেই সেই প্রেম বিদায় নেয়।তবে এই কয়েকমাসে সে হাসান ভাইয়ের থেকে সে তেমন যোগাযোগ রাখে না।তাদেএ দূরত্ব কিছুটা বেড়ে যায় যেমন টা কথকের মনে হয়।তবে হাসান ভাই এইসব এ কিছুই মনে করেন না।কারণ সবার জীবনেই এইসব কাহিনি থাকে।হাসান ভাইয়ের ও ছিল।আস্তে আস্তে হাসান ভাই তার ভার্সিটি জীবন শেষ করে বিসিএস এর প্রিপারেশন নেয় ও কথক এদিকে একলা হয়ে পড়ে।কিছুদিনের মধ্যেই হাসান ভাইয়ের জব হয়। শিক্ষামন্ত্রীর অনেক কাছের লোক হিসেবে তিনি পড়াশোনায় কিছু নতুনত্ব আনার চেষ্টা করে যার নতুন নাম হয় ‘ভালো থাকা’ নামে নতুন একটি বই।আসলে সবার জীবনে হাসান ভাইয়ের মতো একজন বন্ধু অথবা বড় ভাই থাকা প্রয়োজন।যারা নিজের ও তার আশেপাশের মানুষদের সুন্দর ও কম প্রত্যাশা নিয়ে নিয়ে বাঁচতে শেখায়।জীবনে যত কষ্ট বা সমস্যাই থাকুন না কেনো সকলের ই বলা উচিত ‘প্যারা নাই চিল’